নহি মোরা জীব ভोग বিলাসের,
শাহাদত ছিলো কাম্য মোদের,
ভিখারির সাজে খলিফা যাদের
শাসন করিল আধা-জাহান
তারা আজ পড়ে ঘুমায় বেহুঁশ,
বাহিরে বহিছে ঝড় তুফান॥
ঘুমাইয়া কাজা করেছি फজর,
তখনও জাগিনি যখন জোহর,
হেলা ও খেলায় কেটেছে আসর,
মাগরিবের আজ শুনি আজান।
জামাতে -শামিল হও রে এশাতে
এখনও জামাতে আছে স্থান॥
বিদ্রোহী কবি তাঁর এ জাগরনি কাব্যের প্রতিটি ছত্রে ছত্রে বর্তমান মুসলিম উম্মাহর প্রকৃত চিত্র অত্যন্ত বস্তুনিষ্ঠভাবে তুলে ধরেছেন। বর্তমান মুসলিম উম্মাহর গাফলত ও অধঃপতনকে এরচেয়ে সুন্দরভাবে হয়ত চিত্রিত করা কঠিন।
ইসলাম একটি চিরন্তন ধর্ম। আল্লাহ তায়ালা এটিকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সুতরাং ইসলাম কখনো পৃথিবী থেকে নिश্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার কোন প্রকার শংকা ও সম্ভাবনা নেই। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা এর ধারক-বাহকদের পরীক্ষা করার নিমিত্তে এবং বাতিলের মোকাবেলায় ইসলামের সত্যতাকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সময় হক ও বাতিলকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেন। আর তখনি হকের ধারক-বাহক ও এর ঝান্ডাবাহীগণ بাতিলের মোকাবেলায় হককে বিজয়ী করার জন্য আত্মনিবেদন আর আত্মত্যাগের নাজরানা পেশ করেন। পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত ইতিহাসের বাঁকে এরূপ অসংখ্য নজীর রয়েছে। কিন্তু কাল পরিক্রমায় রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সোনালী যুগ থেকে এবং তাবেয়ী ও তাবয়ে তাবেয়ীনের শ্রেষ্ঠযুগ থেকে আমরা যতই দূরে যাচ্ছি সত্যের সেই ধারক-বাহকদের নাজরানা পেশের হিম্মত যেন ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। ক্রমেই যেন গাফলতের নিদে বিভোর হয়ে পড়ছে তারা। আর এ অবকাশেই বাতিল যেন সর্বগ্রাসী শক্তি নিয়ে হকের যাত্রাকে স্তিমিত করে দিতে; হককে এ ধরা থেকে মিটিয়ে দিতে হামলে পড়েছে। বাতিলের এভাবে সর্বগ্রাসী হয়ে উঠার এবং হকের আওয়াজ এভাবে স্তিমিত হয়ে যাওয়ার ও হকের ধারক-বাহকদের এরূপ গাফলতের প্রকৃত কারণ কি? কিভাবে বাতিলের মোকাবেলায় হক পূর্বের ন্যায় সক্ষম একটি শক্তি হয়ে উঠতে পারে এবং সর্বোপরি বাতিলের মোকাবেলায় কিভাবে হকের ঝান্ডা পুনঃ উড্ডীন হতে পারে। বক্ষমান নিবন্ধে তারই সংক্ষিপ্ত আলোকপাতের প্রয়াস পাবো ইনশাআল্লাহ।
বর্তমান যুগে ইসলাম ও মুসলমানদের অধঃপতনের কারণগুলোকে যদি শিরোনাম হিসাবে বলি, তাহলো মুসলমানদের কোরআন-সুন্নাহর জ্ঞান তথা ইসলামের বিধি-বিধান সম্পর্কে অজ্ঞতা, ইসলামী সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিস্মৃতি, ভিন্নধর্মীয় সভ্যতা-সংস্কৃতিকে ধারণ ও লালন, আত্মবিস্মৃতি, নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে অজ্ঞতা, আত্মকেন্দ্রিকতা, অতিমাত্রায় ইহকাল ভাবনা ও পরকাল বিস্মৃতি, স্বার্থপরতা, ভ্রাতৃত্ববোধের অভাব, অনৈক্য, বিচ্ছিন্নতা, ফেরকাকন্দী হওয়া, উম্মাহ চিন্তার অভাব ইত্যাদি। বর্তমান এ অধঃপতন থেকে উত্তরণ এবং নিজেদের হৃত গৌরব ও মর্যাদা ফিরে পেতে হলে মুসলিম উম্মাহর জন্য করণীয় কি? কাদের হাত ধরে এ উম্মাহ পুনরায় বিশ্ব দরবারে 자신েদের মর্যাদাকর অবস্থান প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে? সেক্ষেত্রে আমি মনে করি উলামায়ে কерাম এবং যুব সমাজ এই দুই শ্রেণীর হাত ধরেই তা সম্ভব।
যুবকরা প্রতিটি সমাজের অমূল্য সম্পদ। যে সমাজ এ সম্পদকে যত সুন্দরভাবে কাজে লাগাতে সক্ষম হয় তারা সার্বিক উন্নতিতে ততবেশী অগ্রসরমান থাকে। পৃথিবীর ইতিহাসে যত আন্দোলন, সংগ্রাম এবং সংস্কার হয়েছে সবগুলোতেই যুবসমাজের ভূমিকা ও অবদান ছিলো সর্বাপেক্ষা কার্যকর ও স্মরণীয়। কারণ এটি সর্বজন বিধিত যে, তরুণরাই পারে একটি সুখী, সমৃদ্ধশালী ও আদর্শ সমাজ নির্মিাণ করতে। তাই তো পৃথিবীর ইতিহাসের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে তারুণ্যের গৌরবগাঁথা লক্ষ্য করা যায়। ইসলামের ইতিহাসও এর ব্যতিক্রম নয়। পৃথিবীতে যখন আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদের বিপরীতে মানুষ শিরক্ তথা পৌত্তলিকতায় লিপ্ত হয় তখন তরুণ ইবরাহীমই সেই প্রতীমার বিরুদ্ধে চরম বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং প্রতীমাগুলোকে ভেঙ্গে ফেলেন ও নমরূদের অগ্নিকুন্ডে নিক্ষিপ্ত হন। কোরআন মজীদে এ প্রসঙ্গে বিবৃত হয়েছে,
قَالُوا مَنْ فَعَلَ هَذَا بِآلِهَتِنَا إِنَّهُ لَمِنَ الظَّالِمِينَ – قَالُوا سَمِعْنَا فَتًى يَذْكُرُهُمْ يُقَالُ لَهُ إِبْرَاهِيمُ .
তারা বলল: আমাদের উপাস্যদের সাথে এরূপ ব্যবহার কে করল? সে তো নিশ্চয়ই কোন জালিম। কতক লোকে বলল: আমরা এক যুবককে তাদের স¤পর্কে বিরূপ আলোচনা করতে শুনেছি; তাকে ইब্রাহীম বলা হয়। (আম্বিয়া:৫৯-৬০) তরুণ হযরত দাঊদ আ.-ই জালিম বাদশাহ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে তাকে হত্যা করেন। সত্যসন্ধানে সমকালীন বাদশাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারী আসহাবে কাহফও ছিলো একদল তরুণ। এমনিভাবে বদর যুদ্ধে ইসলামের কূখ্যাত সর্বাপেক্ষা ঘৃণিত শত্রু আবূ জাহেলকে হত্যা করেন দুজন যুবক মু‘আয ও মুআওয়ায রা.। বদর যুদ্ধে যুবকদের ভূমিকা প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে রয়েছে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ بَدْرٍ: مَنْ فَعَلَ كَذَا وَكَذَا، فَلَهُ مِنَ النَّفَلِ كَذَا وَكَذَا. قَالَ: فَتَقَدَّمَ الْفِتْيَانُ وَلَزِمَ الْمَشْيَخَةُ الرَّايَاتِ فَلَمْ يَبْرَحُوهَا,
হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, বদরের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলлেন, যে ব্যক্তি এই এই কাজ করতে পারবে তাকে গনীমাত থেকে এই এই (পুরস্কার) দেয়া হবে। এ কথা শুনে যুবকরা সম্মুখে এগিয়ে গেলো এবং বয়স্করা পতাকার কাছে অটলভাবে দাঁড়িয়ে রইলেন। (আবূ দাঊদ) তেমনিভাবে খায়বার যুদ্ধে কামূছ দূর্গের লৌহকপাট তুলে সেটিকে ঢাল হিসাবে ব্যবহারকারী হলেন তরুণ আলী রা.। তেমনিভাবে ইসলামের ইতিহাসে প্রায় সকল যুদ্ধের নেতৃত্বে ছিলেন তরুণরা। স্পেন বিজয়ী ছিলেন তরুণ তারেক বিন যিয়াদ রহ.। ভারতবর্ষ বিজয়ী ছিলেন তরুণ মোহাম্মদ বিন কাসিম। মোটকথা ইতিহাসের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামেই ছিলো তারুণ্যের অনন্য ভূমিকা।
সমাজ সংস্কারে উলামায়ে কেরামের দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত এবং যুগে যুগে তা স্বীকৃত। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ-
তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত যারা কল্যাণের পথে (কোরআন ও সুন্নাহর পথে) আহবান করবে এবং সৎকাজের আদেশ দিবে ও মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে। তারাই সফলকাম। (আলে-ইমরান:১০৪)
রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকালের পর থেকে প্রতিটি যুগেই সমাজে যত প্রকার অসঙ্গতি দেখা দিয়েছিলো, মানুষের মধ্যে কুফর, শিরক্ বিদ‘আত ইত্যাদি যত প্রকার কুসংস্কার দেখা দিয়েছিলো সবকিছু থেকে জাতিকে মুক্ত করার গুরু দায়িত্ব সব সময় উলামায়ে কেরামই পালন করে গেছেন। তাই তো ইমাম আযম আবূ হанীফা রহ. থেকে নিয়ে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রতিটি আলেমের জীবনী আলোকপাত করলে দেখা যাবে তাঁদের সেই সংগ্রাম আর সাধনা। তাই বর্তমান এ অধঃপতিত ও জাহেলিয়াতের পুনরাবৃত্তিকারী এ সমাজ সংস্কারেও বর্তমান আলেম সমাজকেই দায়িত্ব পালন করতে হবে.
সমাজের নেতৃত্ব প্রদানের জন্য, সমাজ সংস্কারের জন্য, সমাজকে কাংখিত লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য একজন আলেমকে গভীর জ্ঞানের অধিকারী হওয়ার কোন বিকল্প নেই। কারণ গভীর জ্ঞানের অধিকারী ব্যক্তির পক্ষেই সম্ভব সমাজের অসঙ্গতিগুলো নিরূপন করে তার সমাধান দেয়া ও সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করা। বিশেষত বর্তমান ফিতনা-ফাসাদের যুগে যখন মানুষকে ফিতনায় নিপতিত করার জন্য; তাদের ঈমান হরণ করার জন্য বিভিন্ন ফিতনাবাজ তাদের মিশন নিয়ে মাঠে সক্রিয় তখন গভীর জ্ঞানের অধিকারী না হলে তাদের মোকাবেলা করা সম্ভব নয় এবং সমাজকেও কাংখিত গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়।
একজন সমাজ সংস্কারককে অবশ্যই যুগ সমস্যাগুলো সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানের অধিকারী হতে হবে। কারণ যুগের সমস্যাগুলো সম্পর্কে অবগত না থাকলে সেগুলোর সমাধান দেয়াও সম্ভব হবে না। আর সমস্যাগুলোর সমাধান করতে সক্ষম না হলে সমাজ সংস্কার কোনভাবেই সম্ভব নয়। অতএব যুগের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে কোরআন-সুন্নাহ ও ইজমা-কিয়াসের আলোকে তার সমাধানে সক্ষম হওয়া একজন সমাজ সংস্কারের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য।
সমাজ সংস্কার করতে হলে অবশ্যই একজন আলেমকে সমাজে নিজের গ্রহণযোগ্যতা ও সম্মানজনক অবস্থান তৈরী করতে হবে। আর সেজন্য আলেম সমাজকে সামাজিক কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে। সুখে-দুঃখে সমাজের পাশে থাকতে হবে। সমাজের প্রতিটি সংকটে দরদ নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। সমাজের সঙ্গে লেনা-দেনার সম্পর্ক হবে দীনের ভিত্তিতে; পার্থিব স্বার্থ চরিতার্থ করার নিমিত্তে নয়। তাইতো আমরা দেখি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবীরূপে প্রেরণের পূর্বে আল্লাহ তায়ালা আরবের সেই জাহেলী সমাজে তাঁকে সামাজিক কার্যক্রমে গভীরভাবে সম্পৃক্ত করে দিয়েছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে তিনি গঠন করেছিলেন হিলফুল ফুযুল। যার মাধ্যমে তিনি সমাজের অসহায়-দরিদ্র ও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে তাদের খুব আপন করে নিয়েছিলেন। যার ফলে দীনের দাওয়াত দানে তো তিনি তাদের চরম বৈরিতা ও শত্রুতার সম্মুখীন হয়েছিলেন কিন্তু সামাজিক সমস্যার সমাধানে সেই মানুষগুলোই তাঁর উপর আস্থা রেখেছিলো পরম বন্ধুর মতো। এক্ষেত্রে হেরাগুহায় হযরত জিবরাঈল আমীনের সাক্ষাতের পর অস্থির হয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত খাদীজা রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহার নিকট ফিরে এলে তিনি তাঁকে যে সান্ত¦নাবাণী শুনিয়েছিলেন তা প্রনিধানযোগ্য। বোখারী শরীফে তার বিবরণ রয়েছে এভাবে,
فَقَالَ لِخَدِيجَةَ وَأَخْبَرَهَا الْخَبَرَ ” لَقَدْ خَشِيتُ عَلَى نَفْسِي ”. فَقَالَتْ خَدِيجَةُ كَلاَّ وَاللَّهِ مَا يُخْزِيكَ اللَّهُ أَبَدًا، إِنَّكَ لَتَصِلُ الرَّحِمَ، وَتَحْمِلُ الْكَلَّ، وَتَكْسِبُ الْمَعْدُومَ، وَتَقْرِي الضَّيْفَ، وَتُعِينُ عَلَى نَوَائِبِ الْحَقِّ.
অর্থাৎ: ‘তখন তিনি খাদীজা রা. এর নিকট ঘটনাবৃত্তান্ত জানিয়ে তাঁকে বললেন, আমি আমার নিজেকে নিয়ে শংকা বোধ করছি। খাদীজা রা. বললেন, আল্লাহর কসম, কখনই নয়। আল্লাহ আপনাকে কখনো লাঞ্ছিত করবেন না। আপনি তো আত্মীয়–স্বজনের সঙ্গে সদাচরণ করেন, অসহায় দুস্থদের দায়িত্ব বহন করেন, নিঃস্বকে সহযোগিতা করেন, মেহমানের আপ্যায়ন করেন এবং হক পথের দুর্দশাগ্রস্থকে সাহায্য করেন।’’ হযরত খাদীজা রা. রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহu আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এহেন চরম মুহূর্তে সান্ত¦না প্রদানের জন্য তাঁর সামাজিক কার্যক্রমের উল্লেখ করলেন; অন্য কোন বিষয় নয়। অতএব উলামায়ে কেরামকে অবশ্যই সামাজিক কার্যক্রমে অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে। তাহলেই সমাজে নিজেদের মর্যাদাকর অবস্থান তৈরী হবে এবং সমাজের মানুষ তাদেরকে আপন ভেবে দেখানো পথে অগ্রসর হবে.
যে কোন কাজেই সাফল্যের জন্য অন্যতম প্রধান শর্ত হচ্ছে ঐক্য ও সংঘবদ্ধতা। সুতরাং সমাজের সকল প্রকার অসঙ্গতি দূর করে একটি সুখী-সমৃদ্ধশালী ও আদর্শ সমাজ গড়ার জন্য সমাজের মানুষগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং সমাজের নেতৃত্ব প্রদানকারী উলামায়ে কেরামের ঐক্যবদ্ধ চিন্তা-চেতনার অধিকারী হওয়া অত্যন্ত জরুরী। ফলে ইসলামের মৌলিক কোন বিষয় লংঘিত না হওয়া পর্যন্ত কারো বিরুদ্ধে এমন কোন পদক্ষেপ নেয়া বা বক্তব্য প্রদান করা উচিত নয় যা ঐক্যকে ব্যাহত করে এবং বিশৃংখলা ও বিচ্ছিন্নতার জন্ম দেয়.
পরমতসহিষ্ণুতা অত্যন্ত প্রশংসনীয় একটি গুণ। এ গুণের অধিকারী ব্যক্তি কখনো অন্যের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ায় না। বিশেষত দাঈ এবং সমাজ সংষ্কারের জন্য এটি অত্যন্ত জরুরী এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি গুণ। এর মাধ্যমে ব্যক্তি সকলের প্রিয়ভাজন ও আস্থাশীলরূপে নিজেকে গড়ে তুলতে পারে। যা সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে অत्यন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে.
পার্থিবতাপ্রীতি ব্যক্তিকে নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে উদাসীন করে তোলে। ব্যক্তিকে করে তোলে আত্মকেন্দ্রিক, হীনমন্য, লোভী ও স্বার্থপর। ফলে এরূপ ব্যক্তির পক্ষে কখনো সমাজের জন্য উপকারী কোন কাজ করা সম্ভব হয় না। সংস্কার তো অনেক দূরের বিষয়। অতএব সমাজ সংস্কারের গুরু দায়িত্ব পালনকারী একজন আলেমের জন্য অবশ্যই পার্থিবতাপ্রীতি পরিহার অত্যন্ত জরুরী বিষয়.
সব সময়ই ক্ষমতাসীনরা নিজেদের ক্ষমতা নিস্কন্টক করার জন্য যারা সে পথের বাধা হতে পারে তাদের লোভ-লালসা বা ভীতি ইত্যাদির মাধ্যমে দমিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে। বিশেষত বর্তমান বিশ্বে এটি অত্যন্ত প্রকট। সুতরাং অন্যায়-অবিচার ও অসঙ্গতিতে পূর্ণ এ সমাজকে সংস্কার করতে হলে অবশ্যই ক্ষমতাসীনদের এড়িয়ে চলতে হবে। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকবে শুধুই তাদের নিকট দীন পৌঁছে দেয়ার। পার্থিব কোন সুবিধা লাভের নয়। কারণ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সম্পর্কে উম্মতকে অত্যন্ত কঠোরভাষায় সতর্ক করে গেছেন.
عن ابن مسعود قال: إن على أبواب السلطان فتنا كمبارك الإبل، لا تصيبوا من دنياهم شيئا إلا أصابوا من دينكم مثله.
অর্থাৎ হযরত ইবনে মাসঊদ রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাজা-বাদশাহদের দ্বারে উটের খোয়াড়ের ন্যায় ফিতনা রয়েছে। তোমরা তাদের থেকে কোন পার্থিব সুবিধা গ্রহণ করলে তারা তোমাদের দীনের ততটুকু ক্ষতি করে ছাড়বে.
العلماء أمناء الرسل مالم يخالطوا السلطان ويداخلوا الدنيا، فإذا خالطوا السلطان وداخلوا الدنيا فقد خانوا الرسل فاحذروهم. (কানযুল উম্মাল, হাদীস নং:২৮৯৫২)
عن أبي هريرة، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إن أبغض الخلق إلى الله تعالى العالم يزور العمال.
অর্থাৎ: হযরত আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহu তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহi ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালার নিকট নিকৃষ্টতম সৃষ্টi হলো সে আলেম যে রাজা-বাদশাহদের দ্বারে গমন করে.
সমাজ সংস্কারে, সমাজকে উন্নতি ও অগ্রতির পথে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যুব সমাজ হচ্ছে অত্যতম প্রধান হাতিয়ার। সুতরাং যুবসমাজকে ঈমানদার, মুত্তাকী, দীনি জ্ঞানে সমৃদ্ধ, উম্মাহর চিন্তা লালনকারী, ত্যাগের মানাসikতাসম্পন্ন, আমানতদার, উদার নৈতিক আদর্শের অধিকারী, সর্বোপরি আত্মিক শক্তিতে বলিয়ান হিসাবে গড়ে তুলতে হবে.
ওহে নকীব! উদাসীনতা ও আর গাফলতের সর্বনাশা নিদ ভেঙ্গে উঠো, চেয়ে দেখো দুনিয়া তোমাদের দিকে তাকিয়ে। ওহে নকীব! ফের হাঁকে হায়দারী হাঁক। কবি নজরুলের কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে আবার গাও নবজাগরণের গান
শুকনো রুটিরে সম্বল করে
যে ইমান আর যে প্রাণের জোরে
ফিরেছে জগৎ মন্থন করে
সে শক্তি আজ ফিরিয়ে আন।
আল্লাহু আকবর রবে পুন
কাঁপুক বিশ্ব দূর বিমান॥