بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم

Mijanur Rahman 10.09.2025

জামিয়ার শিক্ষাকার্য্যক্রম

জামিয়ার কর্মধারা:
জামিয়া ইসলামিয়া বাইতুল ফালাহ দীনী শিক্ষা ও প্রয়োজনীয় সাধারণ শিক্ষার সমন্বিত ব্যতিক্রমধর্মী একটি ইসলামী বিদ্যাপীঠ। এখানে সুবিন্যস্ত শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে শিশু শ্রেণী থেকে শুরু করে দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) ক্লাস পর্যন্ত শিক্ষা দেয়া হয়, যাতে কোরআন, হাদীস, ফিক্হ, উসুল, আকাঈদসহ আরবী, উর্দূ সাহিত্যের মৌলিক কিতাবাদী পাঠদান করা হয়। নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার লক্ষ্যে মাদরাসায় বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া দেশের সাধারণ জনগনের জন্য দ্বীনি খেদমত আঞ্জাম দেয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়ে থাকে। এসব লক্ষ্য অজ্যন করার জন্য তিনটি প্রকল্প রয়েছে।


১. শিক্ষা প্রকল্প

২. ছাত্র প্রশিক্ষণ কর্মসূচী

৩. সেবা প্রকল্প


শিক্ষা প্রকল্প:
এ প্রকল্পে মোট তিনটি বিভাগ রয়েছে।


মক্তব বিভাগ: এ বিভাগে ২ বছর সময়ে শিশুদের মেধার প্রতি লক্ষ্য রেখে আকর্ষণীয় নূরাণী পদ্ধতির মাধ্যমে অক্ষরজ্ঞান থেকে শুরু করে পূর্ণ কোরআনের বিশুদ্ধ তেলাওয়াত ২/৩ পারা মুখস্থ করানোসহ প্রাথমিক বাংলা, ইংরেজী ও অংক শিক্ষা দেয়া হয়। এছাড়া একজন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের মাসয়ালা-মাসায়িল দোয়া-দুরূদ শিক্ষা দানের পাশাপাশি অযূ, গোসল, নামায ইত্যাদির প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এবং অর্থসহ ৪০ টি হাদীস মুখস্থ করানো হয়।
হিফ্জ বিভাগ: এ বিভাগে মক্তব উত্তীর্ণ ছাত্রদের অনূর্ধ ৪ বৎসর সময়ে অভিজ্ঞ ও যোগ্য হাফেজদের তত্ত্বাবধানে সম্পূর্ণ কোরআন শরীফ মুখস্থ করিয়ে যোগ্য হাফেজ তৈরী করা হয় এবং কিতাব বিভাগে ভর্তির উপযোগী করানোর লক্ষ্যে বিশেষ কোচিং করানো হয়।


কিতাব বিভাগ: এ বিভাগে অত্যন্ত সুবিন্যস্ত পদ্ধতিতে ইবতেদায়ী (প্রাথমিক স্তর) থেকে দাওরায়ে হাদীস (মাষ্টার্স স্তর) পর্যন্ত ক্লাস রয়েছে। ধাপে ধাপে তাফসীর ও ফাতওয়া বিভাগ খোলার পরিকল্পনাও রয়েছে। এ বিভাগে নাহু, সরফ, ফিক্হ, হাদীস, মানতেক, আকাঈদ, আদব, বালাগাত ও দর্শনসহ প্রয়োজনীয় বাংলা, অংক, ইংরেজী, ইতিহাস ও ভূগোল শিক্ষা দিয়ে একজন আদর্শাবান, যোগ্য ও অভিজ্ঞ আলেম তৈরী করা হয়।


ছাত্র প্রশিক্ষণ কর্মসূচী: ধারাবাহিক ও নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষাক্রম ছাড়াও যুগচাহিদা মোতাবেক সমকালীন সকল চ্যলেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য কর্মজীবনের বাস্তব ময়দানে ছাত্ররা যাতে দক্ষ ও অভিজ্ঞ হিসেবে সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে সে লক্ষ্যে জামিয়ার পক্ষ থেকে শিক্ষক মন্ডলীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছাত্রদের মানবিক গুণাবলী বিকাশ সাধনের লক্ষ্যে গঠনমূলক নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়ে থাকে।


এ প্রকল্পে তিনটি বিভাগ রয়েছে:


১. বক্তৃতা প্রশিক্ষণ

২. দেয়ালিকা প্রকাশ

৩. ছাত্র পাঠাগার


বক্তৃতা প্রশিক্ষণ: কোরআন-হাদীসের জ্ঞানার্জনের পর সর্বস্তরের মানুষের মাঝে সে ইলমে ওহীকে পৌঁছে দেয়া উলামা সমাজের দায়িত্ব। আর এ জন্য প্রয়োজন ভাষাগত পান্ডিত্য, সুন্দর ও সহজভাবে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করা, যাতে করে খুব সহজেই সাধারণ মানুষের বোধগম্য হয়। এ জন্য শিক্ষানবীস প্রতিটি ছাত্রের বাকশক্তি প্রস্ফুটিত করে যোগ্যতাসম্পন্ন করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে উস্তাদদের বিশেষ তত্ত্বাবধানে জামিয়ার হল রূমে সপ্তাহে একদিন প্রতিযোগিতামূলক বক্তৃতা প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।


দেয়ালিকা প্রকাশ: বর্তমান সাহিত্যাঙ্গন এক শ্রেণীর ধর্মবিমূখ সুবিধাবাদী কুচক্রীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। বিকৃত রুচি পাশ্চাত্যসেবী এসব কলম ব্যবসায়ীদের কালো থাবায় ইসলাম, মুসলিম সমাজ ও সাহিত্যাঙ্গন ক্ষতবিক্ষত। এ কুচক্রী মহলের হাত থেকে দেশ জাতি ইসলামকে রক্ষার জন্য প্রয়োজন একদল ইসলামী চেতনা ও ভাবধারার কলম সৈনিক। সে লক্ষ্যে সাহিত্য চর্চার জন্য জামিয়ার পক্ষ থেকে বাংলা দেয়ালিকা প্রকাশ করা হয়ে থাকে।


ছাত্র পাঠাগার: জামিয়ার সিলেবাসভূক্ত ধারাবাহিক পাঠ্যসূচির পাশাপাশি ছাত্রদের দেশ ও জাতির সমকালীন অবস্থা ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে ব্যাপক জ্ঞানার্জনের জন্য দেশী বিদেশী খ্যাতিমান লেখকদের তথ্যবহুল বই পুস্তক দ্বারা একটি উঁচুমানের সমৃদ্ধশালী পাঠাগার রয়েছে, যার মাধ্যমে ছাত্ররা যুগোপযোগী বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানার্জন করতে সক্ষম হয়।


সেবা প্রকল্প: জামিয়ার পক্ষ থেকে দেশের আপামর জনসাধারণের কল্যাণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়ে থাকে। নিম্নে প্রকল্পের বিবরণ তুলে ধরা হলো।


ফাতওয়া বিভাগ: সাধারণ জনগণ ব্যক্তি, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে বিভিন্ন বিষয়ে যে জটিলতা ও সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। অভিজ্ঞ মুফ্তী সাহেবদের তত্ত্বাবধানে সে সকল সমস্যার শরীয়ত মোতাবেক বাস্তব ভিত্তিক সমাধান দেয়া হয়।


ফারায়েজ বিভাগ: মৃতব্যক্তির পরিত্যক্ত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি কোরআন-হাদীসের আলোকে বন্টন করে ওয়ারিসগণের নিকট তাদের হক পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারে এ বিভাগ থেকে সহযোগিতা করা হয়।


দাওয়াত ও তাবলীগ: এ বিভাগের মাধ্যমে ছাত্রদের ইসলাহ, কোরআন-সুন্নাহ মোতাবেক জীবন গঠন ও জনসমাজের মাঝে ইসলামের সুমহান দাওয়াত পৌঁছানোর বাস্তব প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। মাঝে মাঝে কাকরাইল থেকে মুরুব্বীগণ ও অন্যান্য আলেম ওলামার মাধ্যমে ছাত্রদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য বিশেষ নছিহতের ব্যবস্থা করা হয়, যার ফলে ছাত্ররা ছুটিতে ৩-৫-৭-১০ দিন করে তাবলীগে সময় লাগায়, এবং রমযানে ১ চিল্লার জন্য ছাত্ররা বের হয়ে থাকে। তাছাড়া একজন বিশিষ্ট উস্তাদের তত্ত্বাবধানে প্রতি সপ্তাহে ২৪ ঘন্টার জন্য ছাত্ররা মহল্লায় দাওয়াতী কাজ করে থাকে।
দুর্যোগ ও দুঃস্থ মানবতার সেবা: মাদরাসার ছাত্র শিক্ষকগণ লেখা-পড়ার পাশাপাশি তাদের নিজেদের উদ্যোগে দুর্যোগ, ঘূর্ণিঝড়, বন্যাকবলিত ও অসহায় মানুষদেরকে তাদের সামর্থানুযায়ী আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকে। এছাড়া প্রতিনিয়ত সমস্যাগ্রস্ত পথিকদেরকে মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের পক্ষ থেকে সাহায্য প্রদান করা হয়।